কি করে বলবো আমি
আমি কে ?
আমি যে এক পথিক
চলেছি আপন মনে
দিক-বেদিক শুন্য হয়ে
কোন এক অচেনা স্থানে ।
হয়তো কারোর সন্ধানে
নয়তো আপন মনে
চলেছি আমি ;
বলব কেমনে , আমি কে !
আমি যে এক পাগল
উন্মাদ চঞ্চল ।
আমি যে এক কবি
যে লেখে সারাদিন
তার কলমটি ধরে ।
তাকে চেনে না কেও
তাকে চায় না কেও
সে যে একদম একা
নিস্তব্ধ জ্যোৎস্নার মতো ।
তারে চিনিবে তুমি কেমনে ;
বলিব কি করে , আমি কে !
একা একা এ জগতে এসেছি
হয়তো চলে যাব –
সেই একা একাই দূর দেশে
কোন এক মেঘের দেশে ;
সোনালি রূপালি পরীর সাথে
বাসা বাঁধব মরনোত্তর জগতে ।
সেথাও কি থাকিব একা হয়ে
যেমনটি আছি ;
তবে বলিব সেথায় কেমনে
আমি কে !
পরিচয়হীন কি আমি
প্রশ্ন জাগিতে পারে ।
না ; পরিচয় আমার-ও আছে
হয়তো সকলের মতো নয়
নয়তো আমার মতো সকলের নয়
আমি যে এক ব্যাতিক্রম
সর্বপ্রথম
ঘটছে আমার জীবনে ,
নতুন লাগছে সবাইয়ের কাছে ।
সেথায় বলিব কি করে
আমি কে !
আমার স্বপ্ন আছে কিনা
জানিনা আমি ;
আমার জন্য কেও বসে আছে কিনা
তাও তো জানিনা ।
আমার পরিবার ছিল কি
আমার নাম ছিল কি
কে বলবে আমায় ।
আমি তো জানি
আমার লখ্য মৃত্যু ,
পরিবার এই মাটি
আর নাম –
জানি না ; আমি কে !
লোকে বলে আমি অনাথ
নেই আমার নাথ ;
নাথ কে ?
তিনি কি জগৎপিতা
না আমার পিতা ;
তিনিও কি পরিচয়ক জীব
নাকি পরিচয়হীন ।
তবে আমার কাছে নেই তার পরিচয় ;
আমি তাই পরিচয়হীন ।
হয়তো পাপের –
নয়তো ভুলের ফল ।
তাই তো জিঙ্গাসা করি বারে বারে
নিজের হৃদয়কে , আমি কে !
আমার জীবনে আছে কি কোন রোমান্স
আমি পাব কি তার চান্স ।
এই জগতের সবার মত করে
গড়ে উঠবে কি আমার সংসার ।
সবার মতো করে আমার-ও কি হবে পরিচয়
আমার-ও কি হবে নাম ।
আমি-ও কি পাড়ব পরিচয়পূর্ন জীব হতে ;
এ সব প্রশ্নের উত্তর কে দেবে ?
ভগবান ! – তাকে তো চিনি না ;
চিনি আমি –
আকাসকে বাতাসকে দেশকে মাটিকে
এরাই তো দিয়েছে আমায় জীবন ;
তাই এদের-ই কাছে প্রশ্ন আমার
আমি কে !
আগে জানতাম না এসব আমি
ছিলাম এক নিষ্পাপ প্রণী ;
একদিন কেও একজন এনেছিল
আমার মধ্যে নতুন প্রাণ ।
জাগিয়ে ছিল আলো আমার মনে ,
বেসেছিল ভালো আমাকে ,
শিখিয়ে ছিল করিতে চিন্তা
বুঝিতে নিজের দায়িত্ব ;
তুলিয়ে দিয়ে তুফান আমার মনে
চলে গেল সে ।
কেন গেল সে , বলি আমি কেমনে ;
সে যে চেয়েছিল আমার পরিচয় ।
কিন্তু তারে তো –
বলিতে পারিনি
আমি কে !
আমার পরিচয়হীনতাই ধ্বংস করল
আমার ভালোবাসা ।
টাইফুনের মতো তার প্রশ্নের ঝড়ে
খুন হল আমার ভালোবাসা ।
সুনামী এসে উড়িয়ে নিয়ে গেল তাকে ;
মহাশূন্যের মাঝে অন্ধকারে থেকে গেলাম আমি
চাঁদের মতো একাকি ।
যার নেই নিজের কিছু
সব-ই যার ধার করা ।
না আলো না জন্ম ;
তার-ই মতো আমার জীবন-ও তো ধার করা ।
যার পরিচয়ও সমাজের দেওয়া ;
পাপের ফল , অসামাজিক , অপয়ার সন্তান ।
তারে তোমরা যদি শুধাও
তুমি কে –
তবে সে বেচারা বলে কেমনে
আমি কে !
আমি যে মরিচিকার মতো
জীবনের মরুভূমিতে দেখা দিয়ে থাকি ,
কখন পথিকের তৃষ্ণার তরে
কখন-বা ভ্রমের ঘোরে ;
যাকে তুমি দেখিতে পার
যার অনুভূতির আঁচ পেতে পার
কিন্তু তাকে ছুতে পার না ;
সে যে এক অদৃশ্য ।
আর অদৃশ্য বস্তু বলে কেমনে
আমি কে !
আমি এক আলেয়া ,
অস্থানে যার জন্ম
যাকে লোকে দেখে মজার চোখে
নয়তো-বা অন্ধবিশ্বাসে ;
যাকে সবাই ভয় করে কাছে আসে না ।
তারে তোমরা শুধাও তুমি কে ?
কিন্তু সে তো যানে না সে কে ?
তবে সে বলবে কেমন করে
আমি কে !
শশান যাত্রার মুহুর্তে
কে আমাকে দাহ করবে ,
কার কাঁধে চরে এ দেহ কাঠের বিছানায় সয্যা নেবে
কার মুখাগ্নিতে এ দেহ ছাই হবে ,
কেই-বা আমার তরে দুবিন্দু চোখের অশ্রু ফেলবে ;
জান কি তোমরা ?
যদি জানো তো বলো তার নাম
হয়তো সেই বলিতে পারে সবাইকে
আমি কে !
চেয়ে ছিলাম আমি একটা ছোট্ট জীবন ,
সে জীবনে ছিল শুধু একজন ,
তার ভালোবাসার সাথী হয়েই চেয়েছিলাম বাচতে
তার পরিচয়েই কাটাতে চেয়েছিলাম বাকি জীবন ;
কিন্তু ভুলে গিয়েছিলাম আমি কে !
যার পরিচয় নেই , যার অস্তিত্ত্ব নেই ,
তারে কেও কেমনে আপন করিতে পারে
তারে কেও কেমনে জীবনসাথী করিতে পারে ,
তাকে তো লাবারিস্ বলে ছুরে ফেলে দেবে
তারে তো শিয়াল কুকুর দিয়ে বার করে দেবে
জীবন থেকে , ঘর থেকে , হয়তো বা জগৎ থেকে ।
কেননা সে যে পরিচয়হীন ,
সে যে এই সমাজের হীন জীব ;
যার নেই অধিকার ভালোবাসার ,
নেই অধিকার বেচে থাকার ;
তার কর্ম হল জ্বলে পুড়ে মরা
তার লখ্য হল নিজেকে শেষ করা,
এটাই তো সমাজের নিয়ম ।
ভুলে গিয়েছিলাম নিজের কর্ম
তাই তো এই অদৃশ্য বেড়ার জালে বন্দি হয়েছি
জীবনের শেষ কটা মূহুর্ত গুনছি ,
সব শুখ ধুয়ে মুছে গেছে
সব কিছু খতম হয়ে গেছে ,
তবুও জানিনা যখন কেও শুধায় আমারে
আমি কে !
জীবনের অন্তিম পর্বে আমি আমার মনকে বুঝিয়েছি
আমি এক পথিক , আমি এক পাগল , আমি এক জারচ ;
যার নেই কোনো বংশপরিচয় ।
কিন্তু ভুলি কেমনে
আমি যে পরিচয়হীন নই ।
আমার-ও তো পরিচয় আছে ;
আমি এক মানুষ ,
যার চরিত্র সাধারনের মতো ।
আমি এক প্রেমিক
যে খুঁজে বেড়ায় তার সাথীকে জানা-অজানা স্থানেতে ;
আমি এক অজানা অচেনা রক্ত মাংসের শরীর ।
এই তো –
এর চেয়ে বড় পরিচয় কি-ই বা হতে পারে ;
ভগবানের কি আছে কোন পরিচয় ,
তারও কি নাম আছে ?
হয়তো বা নেই ।
আমরা মনগড়া নাম দিয়ে তার অস্তিত্ত্বকে টিকিয়ে রেখেছি ;
তাই আমি বলতে পারি সেও তো পরিচয়হীন ।
এখন আর দুঃখ্য নেই আমার
কেননা বুঝেছি আমি যে –
আমি-ও তো ভগবানের মতো ,
আমি-ও তো তার মতো পরিচয়হীন ।
তিনি পাঠিয়ে ছিলেন আমায় তার অবস্থান বুঝতে,
বুঝেছেন তাঁর অবস্থান ;
হয়তো বা আজ থেকে মুছে যাবে সকলের পরিচয় ,
নয়তো বা আর কোন অভাগার পেট থেকে হবে না
পরিচয়হীন শিশুর জন্ম ।
আজ থেকে ভালোবাসার নামও বদলে যাবে ,
ভালোবাসার তরে গড়ে উঠবে ‘পরিচয়’ নামক প্রাচীর ;
নয়তো বা ভালোবাসার নাম চিরতরে ধুয়ে যাবে ধরনীর বুক থেকে ।
আজ থেকে আর কেও করিবে না প্রশ্ন আমাকে
আমি কে ?
কেননা জেনেছি আমি আজ জগৎপিতার কাছ থেকে
আমি কে ।।
By shayaranapan

Comments
Post a Comment